উন্নতি বনাম ঠুনকো উন্নতি: আমাদের দেশের সুশীল সমাজ ও সরকারের দাবির পর্যালোচনা

 

উন্নতি বনাম ঠুনকো উন্নতি: আমাদের দেশের সুশীল সমাজ ও সরকারের দাবির পর্যালোচনা



ভূমিকা

উন্নতি শব্দটি আমাদের জীবনে নানা অর্থ বহন করে। ব্যক্তিগত, সামাজিক, আর্থিক, এবং জাতীয় পর্যায়ে উন্নতির নানা রূপ রয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে উন্নতি বলতে সাধারণত ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নের কথা বলা হয়। কিন্তু এই উন্নতি কি সত্যিই প্রকৃত উন্নতি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের নানা দিক থেকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে হবে।

অবকাঠামোগত উন্নতি: উন্নতির প্রকৃত চিত্র

পদ্মা সেতু ও অন্যান্য অবকাঠামো

পদ্মা সেতু, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট-ফ্লাইওভার আমাদের দেশের ভৌত অবকাঠামোর উন্নতির উদাহরণ হিসেবে বারবার উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই উন্নতি আসলে কতটা টেকসই এবং সার্বিক উন্নতির প্রতিফলন তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা দরকার।

উন্নতির মাপকাঠি ও প্রকৃত মূল্যায়ন

ইরোপ, আমেরিকা, ইসরাইলের মতো দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম, তারা কি শার্ট বা প্যান্ট বানাতে পারে না? নিশ্চয়ই পারে। কিন্তু তাদের উন্নতির মূল ভিত্তি হলো সুশিক্ষা, গবেষণা, এবং সৃজনশীলতা। ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ তাদের উন্নতির একটি অংশ মাত্র।

দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকায় উন্নতির ভুল ব্যাখ্যা

দুর্নীতি ও উন্নতির নামে অর্থ লুটপাট

আমাদের দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নেই বেশি সময় এবং অর্থ ব্যয় করছেন। দুর্নীতি করে টাকা লুটপাট করার জন্য এবং সরকার এই যে পদ্মা সেতু, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট-ফ্লাইওভার যে অবকাঠামোগত উন্নতি করছে তা আসলে ‘উন্নয়ন’ নয়, বরং ঠুনকো উন্নতি।

শিক্ষার অভাব ও জনসাধারণের উন্নতির ভ্রান্ত ধারণা

সরকারের এই সব প্রকল্পকে উন্নয়ন বলে দেশের জনগণকে বোঝানো সম্ভব হচ্ছে, কারণ আমাদের শিক্ষা এবং জ্ঞানের উন্নতি নাই। জনগণ সঠিক শিক্ষা এবং জ্ঞানের অভাবে এই ঠুনকো উন্নতিকে প্রকৃত উন্নতি বলে মনে করছে।

প্রজন্মের পরিবর্তন ও তার প্রভাব

শৈশব ও কৈশোরের অভাব

আজ যে প্রজন্ম বেড়ে উঠছে, তাদের শৈশব নেই, কৈশোর নেই। অতীত নেই বলে তাদের বর্তমানটি বড় ফাঁকা, বড়ই ঠুনকো। কারণ তাদের পাড়ায় কোনো লাইব্রেরি নেই, যে বই পড়বে। কোনো মাঠ নেই, যেখানে খেলবে। তারা লাইব্রেরি বলতে বুঝে ঘরের কম্পিউটারকে, আয়তন যার ছোট হতে হতে এখন স্মার্টফোনে পরিণত হয়েছে।

প্রযুক্তির প্রভাব ও শারীরিক কার্যক্রমের অভাব

এই স্মার্টফোন রীতিমতো এ প্রজন্মকে মাথা হেঁট করে দিয়েছে। সর্বত্রই মাথা নিচু করে মোবাইল ফোনের বাটন টেপা। খেলার মাঠ বলতে তারা বোঝে পাড়ার চাপা গলিটি বা ফ্ল্যাটের ছোট্ট বারান্দাটিকে।

প্রকৃত উন্নতির মূলমন্ত্র: শিক্ষা ও জ্ঞান

শিক্ষার গুরুত্ব ও সঠিক মান

যেদিন শিক্ষায় এবং জ্ঞানের উন্নতি হবে সেদিন হবে প্রকৃত উন্নতি। শিক্ষা এবং জ্ঞান মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি জাতির উন্নতির মূলমন্ত্র হচ্ছে সুশিক্ষিত ও জ্ঞানী নাগরিক। সেদিনই জাতির প্রকৃত উন্নতি হবে, যেদিন শিক্ষায় এবং জ্ঞানের উন্নতি ঘটবে।

শিক্ষার প্রকৃত রূপ

শিক্ষা কেবলমাত্র ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট অর্জনের বিষয় নয়, এটি মানুষের মননশীলতা, সৃজনশীলতা, এবং নৈতিকতার বিকাশ ঘটায়। শিক্ষিত ব্যক্তি সমাজের প্রতিটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। একটি শিক্ষিত সমাজ কুসংস্কার, অজ্ঞতা, এবং সামাজিক সমস্যার মোকাবিলায় অধিকতর সক্ষম। সুতরাং, সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী একটি দেশের উন্নতির ভিত্তি রচনা করে।

শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের পরিবর্তন

সুশিক্ষা ও নৈতিকতার বিকাশ

শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ কেবলমাত্র জ্ঞান অর্জন করে না, বরং নৈতিকতা এবং মূল্যবোধেরও বিকাশ ঘটে। একটি সুশিক্ষিত জাতি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হয়। সুশিক্ষা জাতির মননশীলতা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়, যা দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য।

শিক্ষা ও সামাজিক পরিবর্তন

আজকের প্রজন্মের হাতে যদি সুশিক্ষা এবং সঠিক মূল্যবোধ তুলে দেওয়া যায়, তবে তারা ভবিষ্যতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। তাদের মেধা এবং সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হবে। একমাত্র তখনই দেশের প্রকৃত উন্নতি সম্ভব।

অবকাঠামোগত উন্নতির সীমাবদ্ধতা

ঠুনকো উন্নতির প্রভাব

পদ্মা সেতু বা বড় বড় বিল্ডিং নির্মাণ দেশের আর্থিক অগ্রগতির প্রতীক হতে পারে, কিন্তু সুশিক্ষা, জ্ঞান এবং সামাজিক নৈতিকতার উন্নতি ছাড়া এই অবকাঠামোগত উন্নতি কতটা টেকসই হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য শিক্ষা এবং জ্ঞানের উপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।

অবকাঠামোগত উন্নতির অর্থনৈতিক দিক

অবকাঠামোগত উন্নতি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে, কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার এবং টেকসই উন্নতির জন্য শিক্ষিত এবং জ্ঞানী জনগণের প্রয়োজন। আমাদের দেশে দুর্নীতির কারণে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প ব্যর্থ হয়, যা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত উন্নতি

শিক্ষা এবং সৃজনশীলতার বিকাশ

শিক্ষা কেবলমাত্র ডিগ্রি অর্জনের বিষয় নয়, বরং এটি মানুষের মননশীলতা, সৃজনশীলতা, এবং নৈতিকতার বিকাশ ঘটায়। শিক্ষিত ব্যক্তি সমাজের প্রতিটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। একটি শিক্ষিত সমাজ কুসংস্কার, অজ্ঞতা, এবং সামাজিক সমস্যার মোকাবিলায় অধিকতর সক্ষম।

শিক্ষা এবং জ্ঞানের গুরুত্ব

সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী একটি দেশের উন্নতির ভিত্তি রচনা করে। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ কেবলমাত্র জ্ঞান অর্জন করে না, বরং নৈতিকতা এবং মূল্যবোধেরও বিকাশ ঘটে। একটি সুশিক্ষিত জাতি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হয়।

উপসংহার

অবকাঠামোগত উন্নতি যেমন পদ্মা সেতু, ব্রিজ, এবং রাস্তাঘাট দেশের উন্নতির একটি অংশ হতে পারে, কিন্তু এই উন্নতি যদি মানুষের জীবনের মান উন্নত না করে তবে তা ঠুনকো উন্নতি ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দেশের প্রকৃত উন্নতি তখনই সম্ভব, যখন শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে, জ্ঞানের চর্চা হবে এবং মানুষের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের উন্নতি ঘটবে। শিক্ষা, জ্ঞান, এবং নৈতিকতার বিকাশই একটি জাতির প্রকৃত উন্নতির মূলমন্ত্র।

ড. রেজাউল করিম, এই গবেষণা নিবন্ধের লেখক

#বুদ্ধিরবাতিঘর #শিক্ষা #জ্ঞান #শেখা #ফেসবুকপেইজ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ