শিক্ষার কার্যাবলি: এক বিস্তৃত বিশ্লেষণ

শিক্ষার কার্যাবলি: এক বিস্তৃত বিশ্লেষণ

ভূমিকা

শিক্ষা একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জ্ঞান, দক্ষতা, মানসিকতা এবং মূল্যবোধগুলি অর্জিত হয়। এটি ব্যক্তিগত এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। শিক্ষা কেবলমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর কার্যাবলি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। শিক্ষার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে বিকশিত করা সম্ভব হয় এবং সমাজে সুশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায়।

শিক্ষা ব্যক্তিকে সচেতন, দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। এটি সমাজের যোগ্যতম ব্যক্তি বর্গকে বাছাই করার ব্যাপারে সহায়ক এবং তাদের রাজনৈতিকভাবে দক্ষ করে তোলে। জম্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রেই শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

শিক্ষার কার্যাবলি: সমাজজীবনে শিক্ষার ভূমিকা

সমাজজীবনে শিক্ষার ভূমিকা সর্বদিক দিয়ে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে শিক্ষার কার্যাবলি উল্লেখ করা হলো:

১. সচেতনতা সৃষ্টি

শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সচেতন হয়। এটি ব্যক্তি এবং সমাজের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রক্রিয়া, ঘটনা এবং সমস্যার সম্পর্কে ধারণা দেয়। সচেতনতা মানুষের চিন্তা এবং কর্মে প্রভাব ফেলে, যা সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখে। উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিবেশ সচেতনতা এবং সামাজিক সচেতনতা শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হয়।

  • পরিবেশ সচেতনতা: পরিবেশ সম্পর্কিত শিক্ষা ব্যক্তিকে তার চারপাশের প্রকৃতি এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এটি পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • সামাজিক সচেতনতা: সামাজিক বিষয়াবলী যেমন লিঙ্গ সমতা, মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।
  • স্বাস্থ্য সচেতনতা: স্বাস্থ্য শিক্ষা মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করে।
  • ২. দক্ষতা উন্নয়ন

    শিক্ষা মানুষের বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক। এটি তাকে নতুন নতুন জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন বিষয়ের উপর গভীরতর জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রদান করা হয়। এই দক্ষতাগুলি ব্যক্তির পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনে সফল হতে সাহায্য করে।

  • যোগাযোগ দক্ষতা: শিক্ষা যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম এবং পদ্ধতি শেখায়। এটি মৌখিক, লিখিত এবং অ-মৌখিক যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করে।
  • সমস্যা সমাধানের দক্ষতা: শিক্ষা ব্যক্তি যাতে বিভিন্ন সমস্যার কার্যকর সমাধান করতে পারে সেই দক্ষতা গড়ে তোলে।
  • প্রযুক্তিগত দক্ষতা: আধুনিক শিক্ষা প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়, যা বর্তমান বিশ্বে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
  • ৩. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি

    শিক্ষা মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক। এটি মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা এবং সক্ষমতাকে বিকশিত করে। যখন একজন ব্যক্তি তার অর্জিত জ্ঞান এবং দক্ষতা ব্যবহার করে সফল হয়, তখন তার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। আত্মবিশ্বাস মানুষকে জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সহায়তা করে।

  • নিজের ওপর বিশ্বাস: শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
  • নেতৃত্বের গুণাবলি: শিক্ষা নেতৃত্বের গুণাবলি এবং দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে, যা একজন ব্যক্তিকে সফল নেতৃত্ব দিতে সক্ষম করে।
  • আত্মনির্ভরশীলতা: শিক্ষা ব্যক্তি যেন নিজে নিজের উপর নির্ভর করতে পারে সেই সক্ষমতা গড়ে তোলে।
  • ৪. নৈতিক মূল্যবোধ উন্নয়ন

    শিক্ষা মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে। এটি তাকে সঠিক এবং ভুলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে শেখায়। নৈতিক শিক্ষা মানুষের চরিত্র গঠনে এবং সমাজে সুশৃঙ্খলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • নৈতিক মূল্যবোধ: শিক্ষা ন্যায়পরায়ণতা, সততা, সহমর্মিতা ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি শেখায়।
  • সামাজিক মূল্যবোধ: শিক্ষা ব্যক্তি যাতে সামাজিক দায়বদ্ধতা অনুভব করে এবং সমাজের প্রতি তার কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হয় সেই মূল্যবোধ গড়ে তোলে।
  • ৫. সামাজিক সংহতি

    শিক্ষা সমাজে সংহতি ও সাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সহানুভূতি এবং সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করে। শিক্ষা মানুষকে সহনশীল এবং সহানুভূতিশীল হতে শেখায়, যা সামাজিক সংহতির জন্য প্রয়োজনীয়।

  • সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য: শিক্ষা ব্যক্তি যাতে তার নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হয় এবং তা লালন করতে পারে।
  • সামাজিক সম্প্রীতি: শিক্ষা সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • ৬. সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা

    শিক্ষা মানুষের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি তাকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে যুক্তিসঙ্গত এবং কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণে সক্ষম করে। সমস্যা সমাধানের দক্ষতা মানুষের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে অপরিহার্য। সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা মানব জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। এটি ব্যক্তির জীবনে একটি সার্বিক প্রয়োজনীয় দক্ষতা, যা সমস্যা সম্মুখীন হলে তার জীবনের বিভিন্ন দিক ও ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়ার সাথে তার ক্ষমতা ও প্রতিবাদ দেখায়। এটি ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব ও সহযোগিতা প্রকাশের একটি উপায় হওয়ার সাথে সাথে সমাজের উন্নতি ও প্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়।

    সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রসার


    • পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ: সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ হল সমস্যাটির মূল কারণ ও পরিস্থিতির উপর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা। এটি ব্যক্তির বোধশক্তি ও নিয়মিত চিন্তাভাবনা কৌশল উন্নত করে।

    • সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তা: সমস্যা সমাধানের জন্য আবিষ্কৃতিমূলক চিন্তা এবং নতুন দিকের দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এটি ব্যক্তিকে বিশেষ ধরণের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা উন্নত করে।

    • পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়াবদ্ধতা: সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়াবদ্ধতা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যক্তিকে নিয়মিত ও কার্যকর পরিকল্পনা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

    • সহযোগিতা ও দক্ষতা: সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যক্তির সমাধানশীলতা ও দক্ষতা উন্নত করে এবং সমাজে সামাজিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ায়।

    • গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা ও সমর্থন: সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও সমর্থন প্রদান করা জরুরি। এটি ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস ও সহানুভূতি উন্নত করে।

    • তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ: সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিকে তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। এটি ব্যক্তির মৌলিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বাড়ায়।

    • সঠিক সময়ে সঠিক প্রক্রিয়া: সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিকে সঠিক সময়ে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া প্রতিরূপ করে তুলে এবং সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা ও প্রয়োগে সাহায্য করে।

    সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি দক্ষতা হিসেবে প্রতিফলিত হতে পারে, যা তাকে সামাজিকভাবে, মানসিকভাবে এবং পেশাদার জীবনে সমৃদ্ধ করে।

    ৭. ব্যক্তিগত উন্নয়ন

    শিক্ষা ব্যক্তির সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি তার ব্যক্তিত্ব, আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গির উপর গভীর প্রভাব ফেলে।

    • আত্ম-উন্নয়ন: শিক্ষা ব্যক্তি যেন তার আত্মসচেতনতা বাড়াতে পারে সেই সুযোগ প্রদান করে।
    • সৃজনশীলতা: শিক্ষা ব্যক্তি যাতে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করতে পারে এবং নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে পারে সেই দক্ষতা গড়ে তোলে।
    • সাহিত্য ও শিল্প: শিক্ষা ব্যক্তি যাতে সাহিত্য ও শিল্পের প্রতি আগ্রহী হয় এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারে।

    ৮. অর্থনৈতিক উন্নয়ন

    শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।

    • কর্মসংস্থান: শিক্ষা ব্যক্তি যেন তার উপযুক্ত কর্মসংস্থান পেতে পারে সেই দক্ষতা প্রদান করে।
    • উদ্যোক্তা সত্তা: শিক্ষা ব্যক্তি যেন উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে পারে সেই যোগ্যতা গড়ে তোলে।
    • আয় বৃদ্ধি: শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি তার আয় বৃদ্ধি করতে পারে এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে।

    ৯. বিশ্ব নাগরিকত্ব

    শিক্ষা ব্যক্তি যাতে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেই সুযোগ প্রদান করে। এটি তার মধ্যে আন্তর্জাতিক চিন্তাভাবনা এবং বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতা গড়ে তোলে।

    • বহুমুখী জ্ঞান: শিক্ষা বিভিন্ন বিষয়ের উপর বহুমুখী জ্ঞান প্রদান করে, যা ব্যক্তিকে বিশ্বব্যাপী চিন্তাভাবনা করতে সক্ষম করে।
    • আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি: শিক্ষা বিভিন্ন দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

    শিক্ষার এই বহুমুখী কার্যাবলি ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশিক্ষিত সমাজই কেবল একটি উন্নত এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে পারে।


    শিক্ষার বিভিন্ন স্তর

    শিক্ষার কার্যাবলি পূরণ করতে হলে এর বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। শিক্ষার বিভিন্ন স্তর নিম্নরূপে আলোচনা করা হলো:

    ১. প্রাথমিক শিক্ষা

    প্রাথমিক শিক্ষা হল শিক্ষার প্রথম ধাপ, যা শিশুর জীবন গঠনের ভিত্তি স্থাপন করে। এই স্তরে শিশুদের মৌলিক জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রদান করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে পাঠাভ্যাস, সামাজিক মূল্যবোধ, এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়।

    ২. মাধ্যমিক শিক্ষা

    মাধ্যমিক শিক্ষা হল শিক্ষার দ্বিতীয় ধাপ, যা প্রাথমিক শিক্ষার উপর ভিত্তি করে আরও উন্নত জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রদান করে। এই স্তরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর গভীরতর ধারণা দেয়া হয় এবং তাদের মধ্যে বিশ্লেষণ ক্ষমতা গড়ে তোলা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষা এবং পেশাগত জীবনের জন্য প্রস্তুত করে।

    ৩. উচ্চশিক্ষা

    উচ্চশিক্ষা হল শিক্ষার তৃতীয় ধাপ, যা শিক্ষার্থীদের বিশেষায়িত জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রদান করে। এই স্তরে শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ এবং ক্ষমতা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ের উপর গভীরতর শিক্ষা গ্রহণ করে। উচ্চশিক্ষা শিক্ষার্থীদের গবেষণা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম করে।

    শিক্ষার প্রভাব

    শিক্ষার কার্যাবলি মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এর কিছু প্রধান প্রভাব নিম্নরূপে আলোচনা করা হলো:

    ১. ব্যক্তিগত উন্নতি

    শিক্ষা মানুষের ব্যক্তিগত উন্নতিতে সহায়ক। এটি মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, স্বাধীনতা এবং দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি করে। শিক্ষা মানুষের চিন্তাশক্তি এবং সৃজনশীলতাকে উন্নত করে, যা তার ব্যক্তিগত জীবনে উন্নতি সাধন করে।

    ২. সামাজিক উন্নতি

    শিক্ষা সমাজের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সামাজিক সংহতি, ন্যায়বিচার এবং সাম্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। শিক্ষা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সহনশীলতা এবং সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করে, যা সামাজিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।

    ৩. অর্থনৈতিক উন্নতি

    শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে। এটি মানুষের পেশাগত দক্ষতা উন্নত করে, যা তাকে কর্মসংস্থানে সফল হতে সহায়ক। শিক্ষিত মানুষ তার জ্ঞান এবং দক্ষতা ব্যবহার করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে পারে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

    ৪. স্বাস্থ্য সচেতনতা

    শিক্ষা মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি তাকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে ধারণা দেয়। শিক্ষা স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার উন্নতিতে সহায়ক এবং সমাজের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

    শিক্ষার বিভিন্ন মাধ্যম

    শিক্ষার কার্যাবলি পূরণ করতে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। নিম্নে শিক্ষার কিছু প্রধান মাধ্যম উল্লেখ করা হলো:

    ১. প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা

    প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হল শিক্ষার প্রাথমিক এবং প্রধান মাধ্যম। এটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমে প্রদান করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষের জীবনের মৌলিক এবং বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জনে সহায়ক।

    ২. অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা

    অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা হল শিক্ষার আরেকটি মাধ্যম, যা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে ঘটে। এটি পরিবার, সমাজ, গণমাধ্যম এবং অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

    ৩. অনলাইন শিক্ষা

    তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে অনলাইন শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কোর্স এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে। অনলাইন শিক্ষা মানুষের জন্য সময় এবং স্থান নির্বিশেষে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে।

    শিক্ষার চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান

    শিক্ষার কার্যাবলি পূরণ করতে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নিম্নে কিছু প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং তাদের সমাধান উল্লেখ করা হলো:

    ১. শিক্ষার অপ্রতুলতা

    শিক্ষার অপ্রতুলতা একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। অনেক উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষার সুযোগ সীমিত। এই সমস্যা সমাধানে সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন।

    ২. শিক্ষার মান

    শিক্ষার মান উন্নত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার মান নিম্নমানের থাকে। এই সমস্যা সমাধানে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষাক্রমের উন্নয়ন প্রয়োজন।

    ৩. প্রযুক্তির ব্যবহার

    শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় শিক্ষার কার্যাবলি ব্যাহত হয়। এই সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তি সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

    উপসংহার

    শিক্ষা মানুষের জীবনের অন্যতম প্রধান সম্পদ, যা তাকে সচেতন, দক্ষ এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। এটি ব্যক্তির মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে বিকশিত করে এবং তাকে সমাজের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলে। শিক্ষার কার্যাবলি মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে এবং সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখে। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত তার জীবনের সর্বক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করা এবং শিক্ষার মাধ্যমে তার জীবনের উন্নতি সাধন করা।