মানব মস্তিষ্কের কাঠামো ও কার্যপ্রণালী

 

মানব মস্তিষ্কের কাঠামো ও কার্যপ্রণালী

মানব মস্তিষ্কের কাঠামো ও কার্যপ্রণালী

মানব মস্তিষ্কের কাঠামো

মানব মস্তিষ্ক অত্যন্ত জটিল এবং বিশাল সংখ্যক স্নায়ুতন্ত্র ও কোষ দ্বারা গঠিত। এটি তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত: সেরিব্রাম, সেরিবেলাম, এবং ব্রেনস্টেম। প্রতিটি অংশের নির্দিষ্ট কাঠামো ও কার্যপ্রণালী রয়েছে।

  1. সেরিব্রাম:

    • সংজ্ঞা: এটি মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ এবং এটি দুইটি হেমিস্ফিয়ারে বিভক্ত: বাম এবং ডান।
    • কাঠামো: সেরিব্রাম চারটি লোব (lobes) নিয়ে গঠিত: ফ্রন্টাল লোব, প্যারাইটাল লোব, অক্সিপিটাল লোব, এবং টেম্পোরাল লোব।
      • ফ্রন্টাল লোব: সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা সমাধান, আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যক্তিত্বের জন্য দায়ী।
      • প্যারাইটাল লোব: স্পর্শ, স্বাদ এবং তাপমাত্রা সংবেদন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ।
      • অক্সিপিটাল লোব: দৃশ্যমান প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী।
      • টেম্পোরাল লোব: শ্রবণ এবং ভাষা প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী।
  2. সেরিবেলাম:

    • সংজ্ঞা: এটি মস্তিষ্কের পেছনের দিকে অবস্থিত ছোট অংশ।
    • কাঠামো ও কার্যপ্রণালী: সেরিবেলাম শারীরিক সমন্বয়, ভারসাম্য এবং গতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  3. ব্রেনস্টেম:

    • সংজ্ঞা: এটি মস্তিষ্কের নিম্নতম অংশ যা স্পাইনাল কর্ডের সাথে যুক্ত।
    • কাঠামো: ব্রেনস্টেম তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত: মিডব্রেন, পন্স এবং মেডুলা ওব্লোংগাটা।
      • মিডব্রেন: চক্ষু ও শ্রবণ প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
      • পন্স: মুখের পেশী নিয়ন্ত্রণ ও শ্বাসের জন্য দায়ী।
      • মেডুলা ওব্লোংগাটা: হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী

মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী অত্যন্ত জটিল এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যপ্রণালী নিচে আলোচনা করা হলো:

  1. তথ্য প্রক্রিয়াকরণ:

    • নিউরন: মস্তিষ্কে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন বা স্নায়ুকোষ রয়েছে যা একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করে।
    • সিন্যাপস: নিউরনগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী স্থান যা মাধ্যমে নিউরোট্রান্সমিটার নামক রাসায়নিক সিগন্যাল প্রবাহিত হয়।
  2. মোটর কার্যপ্রণালী:

    • মোটর কর্টেক্স: ফ্রন্টাল লোবের একটি অংশ যা শরীরের পেশী আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করে।
    • সেরিবেলাম: সমন্বয় এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।
  3. সংবেদনশীল কার্যপ্রণালী:

    • সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্স: প্যারাইটাল লোবের একটি অংশ যা স্পর্শ, চাপ, এবং তাপমাত্রা সংবেদন প্রক্রিয়া করে।
    • অডিটরি কর্টেক্স: টেম্পোরাল লোবের অংশ যা শ্রবণ প্রক্রিয়া করে।
    • ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স: অক্সিপিটাল লোবের অংশ যা দৃশ্যমান তথ্য প্রক্রিয়া করে।
  4. স্মৃতি ও শিক্ষণ:

    • হিপ্পোক্যাম্পাস: টেম্পোরাল লোবের একটি অংশ যা দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি গঠন এবং শিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
    • অ্যামিগডালা: আবেগীয় স্মৃতি এবং প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী।
  5. ভাষা ও যোগাযোগ:

    • ব্রোকাস এরিয়া: ফ্রন্টাল লোবের একটি অংশ যা ভাষা উৎপাদনের জন্য দায়ী।
    • ওয়ার্নিকেস এরিয়া: টেম্পোরাল লোবের একটি অংশ যা ভাষা বোঝার জন্য দায়ী।
  6. নিয়ন্ত্রণ ও স্বয়ংক্রিয় কার্যপ্রণালী:

    • অটোনোমাস নার্ভাস সিস্টেম: মস্তিষ্কের একটি অংশ যা স্বয়ংক্রিয় কার্যপ্রণালী যেমন হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হজম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

উপসংহার

মানব মস্তিষ্কের কাঠামো ও কার্যপ্রণালী অত্যন্ত জটিল ও বিস্ময়কর। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের নির্দিষ্ট কার্যপ্রণালী এবং নিউরনগুলির সমন্বয়ে গঠিত জটিল স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে মানুষ চিন্তা, অনুভূতি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হয়। এই জটিল সিস্টেম মানব জীবনে এবং সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


ড. রেজাউল করিম, এই গবেষণা নিবন্ধের লেখক

#বুদ্ধিরবাতিঘর #শিক্ষা #জ্ঞান #শেখা #ফেসবুকপেইজ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ