ভারতের তাবেদার খুনি হাসিনার অপরাধ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্কের শেষ নেই। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে যেসব গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো প্রমাণ করে যে তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং ইতিহাসের এক নৃশংস শাসক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। শেখ হাসিনার অপরাধের তালিকা এতটাই দীর্ঘ যে তার শাসনের বর্বরতা বিশ্লেষণ করতে গেলে বিভিন্ন পর্যায়ে তা বিস্তৃত হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো—বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্রসমাজকে লক্ষ্য করে সংগঠিত হত্যাকাণ্ড। বিভিন্ন সময় মেধাবী ছাত্রদের নিধন করে শেখ হাসিনা তার শাসনামলকে টিকিয়ে রাখার জন্য দেশকে মেধাশূন্য করার মতো ঘৃণ্য কাজ করে গেছেন। মেধাবী ছাত্রদের প্রতি তার এই নির্দয়তার নজির মিলবে না। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীও যেভাবে মেধাবীদের উপর নিপীড়ন চালায়নি, শেখ হাসিনা সেই সকল ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের প্রবর্তক হিসেবে কাজ করে গেছেন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে যে উন্নতির প্রত্যাশা ছিল, তা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে গেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তিনি এমনভাবে হত্যা, গুম, এবং নির্যাতন চালিয়েছেন যা স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। শেখ হাসিনা যে অপরাধগুলো করেছেন, তার মধ্যে মেধাবী নিধন সবচেয়ে ভয়াবহ। তিনি ছাত্রদের উপর অবর্ণনীয় নিপীড়ন চালিয়েছেন এবং দেশকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে এই সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এর ফলে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে পড়ে যায়।
শেখ হাসিনার অপরাধের ধারাবাহিকতা শুধু মেধাবী নিধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ আরেকটি অধ্যায় হলো—শেখ হাসিনার শাসনামলে গুমের সংস্কৃতি। ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তানি শাসন, কিংবা স্বৈরাচারী সরকারের সময়েও পদ্ধতিগত গুমের এমন ভীতিকর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন শাসনব্যবস্থা সিস্টেমেটিকভাবে গুমের সংস্কৃতি চালু করেনি, কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তা তার শাসনের একটি নিত্য হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
শেখ হাসিনা হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে গুম করে তাদের পরিবারের কাছে অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে এসেছেন। এই নিখোঁজ ব্যক্তিদের অধিকাংশই রাজনৈতিক বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিল, যারা সরকারের বিরোধিতা করত। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই পদ্ধতিকে ব্যবহার করেছেন, যা তাকে ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর ও বর্বর শাসকে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের হাজার হাজার পরিবার এখনো তাদের প্রিয়জনের সন্ধান পায়নি এবং এই গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মৃতি তাদের পরিবারের মধ্যে এক অমোচনীয় দুঃখের দাগ হয়ে রয়ে গেছে।
এমনকি এই পদ্ধতিগত গুমের বিষয়টি একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও সমালোচিত হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা তার স্বার্থে এবং ভারতের তাবেদারি নীতির কারণে এই সমস্ত সমালোচনা অগ্রাহ্য করেছেন এবং নির্বিচারে গুমের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার জন্য তার কঠোর শাসন কায়েম করেছেন।
শেখ হাসিনার আরও একটি ভয়াবহ অপরাধ হলো বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড। বাংলাদেশে এর আগে এমন কোনো শাসক ছিল না, যে তার শাসনামলে মাত্র দশ বছরের ব্যবধানে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য এই সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করেছেন। এই বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশ ভিকটিম রাজনৈতিক বিরোধী, সাংবাদিক, এবং মানবাধিকারকর্মী ছিল, যারা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেছিল।
শেখ হাসিনার এই বর্বরতার পরিণতি হলো—বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা বেড়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি সরকার বিরোধী মত পোষণ করে বা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার বক্তব্য দেয়, তাহলে তাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচতে হয়। এমনকি পরিবারের কাছেও এই ভয় থাকে যে, তাদের প্রিয়জনকে রাতের বেলা তুলে নিয়ে যাওয়া হতে পারে এবং তারা হয়তো কখনোই তাকে ফিরে পাবে না।
শেখ হাসিনার শাসনামলে শুধু গুম আর বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি; বরং তিনি সমালোচনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিক, লেখক, এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন, গ্রেফতার, এবং হয়রানি করে তাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
তাছাড়া, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় এমন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা নাগরিকদের মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করেছে। এসব আইনের মাধ্যমে সরকার নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে এবং জনগণের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। এর ফলে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস হয়েছে এবং দেশের বিচার ব্যবস্থা একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে সরকারের হাতের একটি খেলনায় পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা একের পর এক জঘন্য অপরাধ করে গেছেন, যা তাকে ইতিহাসের এক নৃশংস শাসক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
শেখ হাসিনার শাসনের অবসান হওয়া জরুরি শুধু মানবাধিকারের পরিপন্থী এই কর্মকাণ্ডের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্যও। যদি শেখ হাসিনা এবং তার দল এতসব ভয়াবহ অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আরো নৃশংস শাসকের উদ্ভব ঘটতে পারে। তাই এই অপরাধের জন্য শেখ হাসিনার শাস্তি হওয়া অত্যন্ত জরুরি, যেন ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড করতে সাহস না পায়।
আমাদের দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী এবং মিডিয়ার অনেকেই এখনো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। তারা হয়তো মনে করেন যে তিনি দেশের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন, কিন্তু তাদের উচিত শেখ হাসিনার এইসব অপরাধের দিকে নজর দেওয়া এবং তার শাসনের বর্বরতা সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত হওয়া। কারণ যদি তারা এগুলো বিবেচনায় না নেন, তাহলে তারা হয়তো ইতিহাসের ভুল দিকেই অবস্থান নেবেন।
শেখ হাসিনার শাসনের অবসান হওয়া অত্যন্ত জরুরি, এবং আমাদের উচিত তার শাসনের বর্বরতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। কারণ এই অপরাধগুলোর বিচার না হলে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
0 মন্তব্যসমূহ